প্রদেশ
প্রদেশ বলতে কোন একটি দেশ বা রাষ্ট্রের অধীনে একটি প্রসাশনিক অঞ্চল বা বিভাগকে বোঝানো হয়। এই শব্দটি রোমান সাম্রাজ্যের প্রভিন্সিয়া শব্দ থেকে এসেছে। তখন রোমানদের সাম্রাজ্য ইতালির বাইরেও অনেক দূর বিস্তৃত ছিল। তাই তাদেরকে শাসনের সুবিধার জন্য সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করতে হতো। একে বলা হতো প্রভিন্সিয়া। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই প্রদেশ রয়েছে। কিছু কিছু দেশে আবার রাজধানীর বাইরের অঞ্চলকে রুপক অর্থে প্রদেশ হিসেবে বলা হয়। এগুলো সত্যিকারের প্রদেশ হিসেবে গণ্য করা হয় না।
একটি দেশের ভূখণ্ডকে কীভাবে বিভিন্ন প্রদেশে ভাগ করা হয় তা বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে। যেমন যেসব দেশে ব্রিটিশরা শাসন করেছিল, তখন তারাই বিভিন্ন প্রদেশে ভাগ করেছিল যা এখনো আছে। কিছু কিছু দেশে, জাতিগত বৈশিষ্ট্য বা স্থানভেদে সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট অঞ্চলকে প্রদেশে ভাগ করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে, কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি প্রদেশের নিজস্ব ক্ষমতা থাকে, পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে, যেমন কানাডা। আবার কিছু ক্ষেত্রে এই স্বাধীনতা থাকেনা। যেমন চিন এবং ফ্রান্সের প্রদেশগুলোর স্বাধীনতা খুবই কম থাকে, প্রায় পুরোটাই কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করে।
শব্দের উৎস
[সম্পাদনা]"Provincial" ইংরেজি শব্দটি ১৩৩০ সালে লিপিবদ্ধ করা হয়। ১৩-শতকের ফরাসি শব্দ Province থেকে এটি এসেছে। আবার ফরাসি ভাষায় এটি ঢুকেছে লাতিন শব্দ Provincia থেকে। লাতিন এই শব্দ দ্বারা বোঝানো হতো বিদেশি অঞ্চলকে।
Provincia শব্দটিকে ভাঙ্গলে দুটো অংশ পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে Pro, যা বুঝায় পূর্বে। আরেকটি vincere, এটি দ্বারা বোঝায় কোন কিছু দখল করা। অর্থাৎ Provincia দ্বারা বোঝানো হতো বিদেশি কোন অঞ্চল দখল করা। রোমান সাম্রাজ্যে ইতালির বাইরের রাজ্যগুলোর জন্য একজন একজন করে শাসন থাকতেন। তাদেরকে বলা হতো রোমান ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতিটি শাসকের অঞ্চলকে বলা হতো এক একটি প্রভিন্সিয়া। মূলত সেখান থেকেই শব্দটির উৎপত্তি।
ইতিহাস এবং সংস্কৃতি
[সম্পাদনা]
প্রদেশ শব্দটি প্রথম ফ্রান্স এবং ইরানে শুরু হয়। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে এটি উচ্চারিত হয়। যেমন ফ্রান্সে বলা হয় এন প্রভিন্স, যা দ্বারা প্যারিসের বাইরের অঞ্চলকে বোঝায়। এছাড়াও পেরুতে বলা হয় এন প্রভিন্সিয়াস, মেক্সিকোতে লা প্রভিসিন্সিয়া, রোমানিয়ায় ইন প্রভিন্সিয়ে, বুলগেরিয়ায় ভি প্রভিন্সিয়াতা, ফিলিপাইনে তাগা প্রভিনসিয়া ইত্যাদি।
ফরাসী বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচারব্যবস্থায় ভিন্নতা ছিল। একেক স্থানে একেক রকম ছিল। এইসকল আলাদা আলাদা অঞ্চলকেও প্রদেশ বলা হতো।
যুক্তরাজ্যে প্রদেশকে ওতোটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয় না। তবে এটি দিয়ে রাজধানীর বাইরে গ্রাম্য এলাকাগুলোকে বোঝানো হয়। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলের মানুষদের আধুনিক সংস্কৃতির সাথে খুব একটা শখ্যতা নেই।[১]
আধুনিক প্রদেশ
[সম্পাদনা]সবদেশেই একটি একটি প্রসাশনিক অঞ্চলকে প্রদেশ বলা হবে ব্যাপারটি তা নয়। যেমন আরব দেশগুলোয় এর পরিবর্তে বলা হয় মুহাফাজাহ।
অনেক দেশে প্রদেশ অনেক ক্ষুদ্রাকৃতির হয়। যেমন যুক্তরাজ্যের প্রদেশগুলো আকারে ছোট হয়। আবার চীনেও প্রদেশ বলতে বোঝানো একটি রাজ্যের অধীনে ছোট ছোট অঞ্চলকে। এটি জাতীয় কংগ্রেসের সিদ্ধান্তে সৃষ্টি বা বিলুপ্ত হতে পারে।
কানাডা
[সম্পাদনা]কানাডা দশটি প্রদেশে বিভক্ত:
- অন্টারিও (ইংরেজি: Ontario)
- অ্যালবার্টা (ইংরেজি: Alberta)
- কুইবেক (ফরাসি: Québec)
- নিউ ব্রান্সউইক (ইংরেজি: New Brunswick)
- নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং ল্যাব্রাডর (ইংরেজি: Newfoundland and Labrador)
- নোভা স্কোশিয়া (ইংরেজি: Nova Scotia)
- প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপ (ইংরেজি: Prince Edward Island)
- ব্রিটিশ কলম্বিয়া (ইংরেজি: British Columbia)
- ম্যানিটোবা (ইংরেজি: Manitoba)
- সাসকাচেওয়ান (ইংরেজি: Saskatchewan)
নেপাল
[সম্পাদনা]নেপাল সাতটি প্রদেশে বিভক্ত:
- কর্ণালী প্রদেশ
- কোশী প্রদেশ
- গণ্ডকী প্রদেশ
- বাগমতী প্রদেশ
- মধেশ প্রদেশ
- লুম্বিনী প্রদেশ
- সুদূরপশ্চিম প্রদেশ
পাকিস্তান
[সম্পাদনা]পাকিস্তান চারটি প্রদেশে বিভক্ত:
ভারত
[সম্পাদনা]ভারতের পাঁচটি রাজ্যের নামে "প্রদেশ" ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রদেশ
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ
[সম্পাদনা]
শেখ হাসিনা সরকারের অবসানের পর গঠিত মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশকে চারটি প্রদেশে ভাগ করার ভাবনা করেছে। এবিষয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন মূলত বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসাবে আগেকার চারটি বিভাগকে (খুলনা, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী) চারটি প্রদেশে রূপান্তরিত করার সুপারিশ করেছে।[২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Definition of the word Province including the British English derivition"। Lexico। সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৭, ২০১৯।
- ↑ Mitra, Sritama (২০২৫-০১-১৯)। "হাসিনা পরবর্তী আমলে বাংলাদেশে ৪ প্রদেশের সুপারিশ কমিশনের! এল কোন কোন এলাকার নাম?"। Hindustantimes Bangla। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-২৮।